শহীদনূর আহমেদ::
শীত আসতেই টাঙ্গুয়ার হাওরসহ জেলার বিভিন্ন হাওরে তৎপরতা শুরু করেছে পাখি শিকারিরা। তারা ফাঁদ পেতে শিকার করছে দেশীয় প্রজাতির পাখিসহ পরযায়ী পাখি। ফলে হাওরাঞ্চলে যেমন কমে আসছে অতিথি পাখির আগমন, তেমনি কমছে দেশী প্রজাতির পাখির সংখ্যা। পাখি শিকার বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং নজরদারি বৃদ্ধির দাবি পরিবেশবীদের। এদিকে পাখি নিধন ও শিকার বন্ধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। নিয়মতিই বিভিন্ন হাওর ও বিলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে এক সময় পরিযায়ী পাখির সর্বোচ্চ উপস্থিতি দেখা যেতো। দিন দিন পাখির পরিমাণ কমে আসছে। পরিযায়ী পাখি মূলত তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল দূরের পথ উড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে। ওরা আসতে শুরু করে নভেম্বরের শুরুতেই। থাকে এপ্রিল পর্যন্ত থাকে। কিন্তু পাখি শিকারিদের উৎপাত ও হাওরে জেলেদের অবৈধভাবে গাছ নিধনের ফলে পাখি তার অভয়াশ্রম পাচ্ছে না। বার্ডস ক্লাবের তথ্যমতে, গত দশ বছরে সুনামগঞ্জের হাওরে পাখির সংখ্যা কমেছে ৮৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে প্রায় ২ লাখ, ২০১৮ সালে ৬০ হাজার, ২০২২ সালে ৩০ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৩ হাজার, ২০২৪ সালে গত ১৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম মাত্র ২৩ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে এই জেলায়। এর কারণ হিসেবে পাখি শিকারিদের দায়ি করছেন স্থানীয়রা। মূলত প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি তাদের প্রজনন ক্ষেত্র অথবা শীতকালীন আশ্রয়ের সন্ধানে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসে বাংলাদেশের এসব হাওর-বিলে। উপযুক্ত আবহাওয়া, খাদ্য এবং বাসস্থানের খোঁজে তারা ছুটে চলে মহাদেশ থেকে মহাদেশে। কিন্তু বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরে অবাধে পর্যটকদের চলাচল ও পাখি শিকারিদের হানায় ধ্বংস হচ্ছে হাওর, বিলে থাকা পাখিদের স্বাভাবিক আবাসস্থল। আর এতে পাখিদের মূল্যবান আবাসস্থলগুলো হুমকির মুখে পড়ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা আহমদ কবির বলেন, এক সময় এই সময়টাতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা যেতো টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে। গত কয়েক বছর ধরে পাখির উপস্থিতি কমেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ পাখি শিকারিদের উৎপাত ও হাওরের পাখির আবাসস্থল না থাকা। হাওরে এখন পাখির অনুকূল পরিবেশ নেই। শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি যে সকল দেশী জাতের এবং পরিযায়ী পাখিরা টাঙ্গুয়ার হাওরে আসতো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বড় পানকৌড়ি, ছোট ডুবুরি, ধুপনি বক, বেগুনি বক, মেটে রাজহাঁস, ছোট সরালি, বড় সরালি, খুনতে হাঁস, পাটারি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, ফুলুরি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, সিঁথি হাঁস, লাল ঝুটি ভুতি হাঁস ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে এসব পাখি আর চোখে পড়ছে না। সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে পাখি শিকারের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত রবিবার সকালে সদর উপজেলার বারোঘর এলাকার হাওরে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ এলাকাজুড়ে কৃষি জমির উপরে সুতোর ফাঁদ পেতে রেখেছে শিকারিরা। স্থানীয় একাধিক কৃষক পাখি শিকারির নাম না বলতে পারলেও এই স্থানে পাখি শিকার করা বলে জানিয়েছেন।
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক বলেন, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ এই পরিবেশবাদীর। এদিকে ধর্মপাশায় শিকারিদের পাতা ফাঁদ হতে দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে।
গত সোমবার রাতে উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সাদরা বিলে অভিযান চালিয়ে দেশীয় প্রজাতির পাখি উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন। ধর্মপাশা উপজেলা ভূমি সহকারি সঞ্জয় ঘোষ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি জাল ও বিভিন্ন প্রকারের ফাঁদ তৈরি করে পাখি শিকার করে আসছে।
সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার সাদরা বিলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় দুই পাখি শিকারির ফাঁদ হতে দুই শতাধিক বাবুই, শালিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার করে আকাশে অবমুক্ত করা হয়। পাখি শিকারিরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা। পাখি শিকার ও নিধন প্রতিরোধে সকলের সচেতনতার পাশাপাশি এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, গতবছর একজন পাখি শিকারি পাখি শিকার করে লাইভে এসেছিল। এরপর আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পাখি শিকারের বিরুদ্ধে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
হাওরে তৎপর পাখি শিকারিরা, নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ
- আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৫ ০৭:২৪:২৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৫ ০৭:২৭:৫০ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ